এনালগ কম্পিউটার কাকে বলে? কত প্রকার এবং এনালগ কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য?
এনালগ কম্পিউটার কাকে বলে? কত প্রকার এবং এনালগ কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য?
বহু শতাব্দী পূর্বে আবিষ্কৃত হওয়া এনালগ কম্পিউটার গুলো এখনো আমাদের জীবনের সঙ্গে খুবই নিবিড় ভাবে জড়িয়ে আছে। আপনারা অনেকেই প্রতিনিয়ত এমন কিছু ব্যবহার করে থাকে যেগুলো এনালগ কম্পিউটারের উদাহরণ কিন্তু আপনি সেটা জানেন না। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক এনালগ কম্পিউটার কাকে বলে এবং এনালগ কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।
এনালগ কম্পিউটার কি (what is analog computer)
এনালগ কম্পিউটার হচ্ছে এমন একটি কম্পিউটার যা পরিবর্তনশীল বৈদ্যুতিক তরঙ্গ দ্বারা পরিচালিত হয়। তরল পদার্থ চাপ-তাপ ইত্যাদি পরিবর্তনশীল তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া বৈদ্যুতিক তরঙ্গ কে analog computer এ ইনপুট হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম কি?
analog computer কোন ধরনের ইনপুট নেওয়ার পর সেটাকে ডিজিটাল কম্পিউটারের মতো সংরক্ষণ করে না। বরং সাথে সাথে সেটাকে আউটপুট দিয়ে দেয়। input সংকেত পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার output সংকেত ও পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
এনালগ কম্পিউটার কাকে বলে
এনালগ কম্পিউটার (analog computer) এমন এক ধরনের কম্পিউটার বা ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা ক্রমাগত পরিবর্তিত যেটা প্রক্রিয়া করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।সহজ ভাষায় বলতে গেলে যে কম্পিউটার দ্বারা ক্রমাগত ইনপুট নিয়ে সেটির আবার আউটপুট দেয় এবং দৈর্ঘ্য-প্রস্থ, গতি, চাপ-তাপ ইত্যাদি পরিমাপ করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তাকে এনালগ কম্পিউটার (analog computer) বলা হয়।
এনালগ কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি
কাজের ধরন এবং আঁকার-আকৃতির উপর ভিত্তি করে এনালগ কম্পিউটারকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।এনালগ কম্পিউটার কে যে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে সেগুলোর নিচে আলোচনা করা হলো :-
যান্ত্রিক এনালগ কম্পিউটার
ইলেকট্রনিক এনালক কম্পিউটার
হাইড্রোলিক এনালক কম্পিউটার
যান্ত্রিক এনালগ কম্পিউটার কী..?
যান্ত্রিক এনালগ কম্পিউটার বলতে যে কম্পিউটারগুলো যান্ত্রিক উপাদান যেমন:- স্ক্রু লিভার এবং গিয়ার ব্যবহার করে তৈরি করা হয়ে থাকে তাকে যান্ত্রিক এনালগ কম্পিউটার বলা হয়।
ইলেকট্রনিক এনালগ কম্পিউটার কি..?
electronic analog computer হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এক ধরনের এনালগ কম্পিউটার। ইলেকট্রনিক এনালগ কম্পিউটারগুলোতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে রেজিস্টর, ক্যাপাসিটর, ইন্ডাক্টর ইত্যাদি। ক্যালকুলেটর হচ্ছে ইলেকট্রনিক এনালগ কম্পিউটার গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত। এনালগ কম্পিউটার ক্যালকুলেটর গুলোতে যান্ত্রিক উপাদান ব্যবহার করে গণনা করা হয়ে থাকে।
১৭ শতাব্দীতে প্রথম এই এনালগ ক্যালকুলেটর গুলো আবিষ্কার করা হয়েছিল। যা পরবর্তী সময়ে ১৯ শতাব্দীতে এসে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে বিংশ শতাব্দীতে ডিজিটাল ক্যালকুলেটরগুলো তৈরি হওয়ার সাথে সাথে এনালগ কম্পিউটার গুলির জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। electronic এনালগ কম্পিউটার গুলি digital computer এর চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল হওয়ায় এবং এটি ব্যবহারের অনেক জটিল হওয়ার কারণে বর্তমান সময়ে এগুলো ব্যবহার অনেক কমে গিয়েছে।
হাইড্রোলিক এনালগ কম্পিউটার কি..?
হাইড্রোলিক এনালগ কম্পিউটার হলো সবচেয়ে কম ব্যবহৃত এক ধরনের analog computer. হাইড্রোলিক এনালগ কম্পিউটার গুলি মূলত হাইড্রোলিক উপাদান যেমন :- ভালভ,সিলিন্ডার এবং পাম্প ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল কম্পিউটার কি? ডিজিটাল কম্পিউটারের প্রকারভেদ
ডিজিটাল কম্পিউটারের চেয়ে এনালগ কম্পিউটার বেশি দ্রুত এবং সঠিকভাবে কাজ করে। তবে এনালগ কম্পিউটার গুলো বেশি ব্যয়বহুল এবং জটিল। সেজন্য অনেক ক্ষেত্রে এনালগ কম্পিউটার দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ডাটা নিয়ে সেগুলো ডিজিটাল কম্পিউটারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে।
এনালগ কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য সমূহ
এনালগ কম্পিউটার অনেক ধরনের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় ডিজিটাল কম্পিউটারের যুগে এসেও এনালগ কম্পিউটার ব্যবহার করছি আমরা এনালগ কম্পিউটার এর কার্যক্ষমতার কারণে। এনালগ কম্পিউটারের অনেক সুবিধা এবং কিছু অসুবিধা রয়েছে। এনালগ কম্পিউটারের সুবিধা এবং অসুবিধা কারণে অনেকাংশে এই কম্পিউটারের জায়গা দখল করে নিয়েছে ডিজিটাল কম্পিউটার। চলুন তাহলে digital computer এর কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
এনালগ কম্পিউটার গুলোতে ডেটা সময়ের সাথে ধারাবাহিক ভাবে পরিবর্তন হয়ে থাকে।
এনালগ কম্পিউটার যোগ-বিয়োগ, গুন-ভাগ ইত্যাদির মত কাজগুলো সম্পাদন করতে পারে।
analog computer কে নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্যে ডিজাইন করা হয়ে থাকে।
এনালগ কম্পিউটার গুলি সাধারণত বায়ু শব্দ গতিবিধি এবং তাপমাত্রা ইত্যাদির মত বাস্তব বিশ্বের বিভিন্ন অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এনালগ কম্পিউটারের ফলাফল তৈরির গতি অনেক বেশি হয়ে থাকে।
এনালক কম্পিউটার সূক্ষ্মভাবে ফলাফল উপস্থাপন করে থাকে।
এনালগ কম্পিউটারগুলো শিল্পের বিভিন্ন কার্য প্রক্রিয়াগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন:- রাসায়নিক প্রক্রিয়া, তেল ও গ্যাস উৎপাদন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ইত্যাদি কাজে এনালগ কম্পিউটার গুলো ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এই কম্পিউটার গুলি আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এনালগ কম্পিউটার ডেটা ইনপুট নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটার আউটপুট দিয়ে থাকে খুবই দ্রুত।
এনালগ কম্পিউটার একই সাথে অনেক ডাটা গণনা করতে পারে।
এনালগ কম্পিউটার গুলি জটিল কাজ এবং বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করতে পারে।
এনালগ কম্পিউটার গুলি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে থাকে।
এনালগ কম্পিউটারে উদাহরণ
এনালগ কম্পিউটারের উদাহরণের মধ্যে রয়েছে স্পিডোমিটার, সিসমোমিটার, স্লাইডরুল, থার্মোমিটার, টেলিফোন লাইন, ভোল্ট মিটার ইত্যাদি।
স্পিডোমিটার
স্পিডোমিটার হচ্ছে যানবাহনে ব্যবহৃত একটি এনালগ কম্পিউটারের উদাহরণ। স্পিডোমিটার গাড়ির গতি পরিমাপ করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর ইনপুট হল চাকার ঘূর্ণন ও আউটপুট হলো স্কেলে গতি।
সিসমোমিটার
সিসমোমিটার হলো আরেকটি এনালগ কম্পিউটার। সিসমোমিটার এনালগ কম্পিউটার দিয়ে ভূমিকম্প পরিমাপ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। সিসমোমিটার ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্টি হওয়া গতিকে সনাক্ত করার জন্য ওজন এবং লিভারের একটি সেট ব্যবহার করে কাজ করে থাকে।
স্লাইডরুল
স্লাইডরুল মূলত গাণিতিক গণনা সম্পাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
থার্মোমিটার
এটি মূলত স্কেল এবং পারদ ব্যবহার করে কার্য সম্পাদন করে থাকে। পারদের তাপমাত্রার পার্থক্যে স্কেল ওটা নামায় যে ফলাফল প্রদর্শিত হয় সেটি থার্মোমিটারের কাজ।
টেলিফোন লাইন
টেলিফোন লাইনে শব্দ প্রেরণ করার জন্য এনালগ সংকেত ব্যবহার করা হয়। এটি মূলত বৈদ্যুতিক সংকেত প্রেরণ করার জন্য তাদের একটি সিরিজ ব্যবহার করে কাজ করে থাকে।
ভোল্টমিটার
ভোল্ট মিটার মূলত একটি বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্কের দুটি পয়েন্ট এর মাঝে বিদ্যামান সম্ভাব্য পার্থক্য প্রদর্শন করতে ব্যবহার করা হয়।
এনালগ কম্পিউটারের সুবিধা
এনালগ কম্পিউটার ব্যবহারে অনেক ধরনের সুবিধা রয়েছে। আর সেই কারণেই প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত এনালগ কম্পিউটারের ব্যবহার দেখা যায়।ডিজিটাল কম্পিউটারের যুগে এসে বানালো কম্পিউটারের জনপ্রিয়তা কমিয়ে দেওয়ার পরেও এনালগ কম্পিউটার ব্যবহার করে এখনো অনেক ধরনের কাজ করা হয়ে থাকে।
তাছাড়াও এনালগ কম্পিউটারকে ব্যবহার করে ডিজিটাল কম্পিউটারের জন্য ডেটা ইনপুট নেওয়া হয়ে থাকে। চলুন নিচে এনালগ কম্পিউটারের সুবিধা সমূহ জেনে নেওয়া যাক।
এনালগ কম্পিউটার যেকোন ডাটা ইনপুট নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটির আউটপুট দিয়ে থাকে।
একই সাথে অনেক ধরনের ডেটা গণনা করতে পারে এনালগ কম্পিউটার।
এনালগ কম্পিউটার গুলি অনেক ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে থাকে।
এনালগ কম্পিউটারে অসুবিধা
সুবিধার পাশাপাশি এনালগ কম্পিউটারে অনেক অসুবিধা রয়েছে। এনালগ কম্পিউটারের জায়গা অনেক দখল করে নিয়েছে এখন ডিজিটাল কম্পিউটার। চলুন নিচে কম্পিউটারের অসুবিধা গুলো জেনে নেওয়া যাক।
এনালগ কম্পিউটারে মেমোরি পরিমাণ কম হওয়ার কারণে এটি কোন তথ্য সংরক্ষণ করতে পারেনা।
এনালগ কম্পিউটার অনেক ব্যয়বহুল হয়ে থাকে।
এনালগ কম্পিউটার দিয়ে ডিজিটাল কম্পিউটারের মতো সব ধরনের কাজ করা যায় না।
ডিজিটাল কম্পিউটারে এমন কিছু ভিসা রয়েছে যেগুলো এনালগ কম্পিউটারে নেই।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা ও অসুবিধা
এনালগ কম্পিউটার ব্যবহার
অনেক ক্ষেত্রে এনালগ কম্পিউটার ব্যবহার হয়ে থাকে। আজকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এনালগ কম্পিউটার ব্যবহার হয়ে আসছে। এনালগ কম্পিউটার ব্যবহারের কিছু ক্ষেত্রে নাম নিচে উল্লেখ করা হলো:-
এনালগ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়।
ভিডিও এবং অডিও প্রক্রিয়াকরণে এনালগ কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
টেলিযোগাযোগ মাধ্যমে এনালগ কম্পিউটার ব্যবহার হয়ে থাকে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এনালক কম্পিউটার ব্যবহার হয়ে থাকে।
মহাকাশ গবেষণায় এনালক কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আশা করি,উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনারা এনালগ কম্পিউটার সম্পর্কে সম্পূর্ণ একটি ধারণা পেয়ে গেছেন। সেই সাথে এনালগ কম্পিউটার কি এনালগ কম্পিউটার কাকে বলে এবং এনালগ কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি সবকিছুই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এ থেকে এনালগ কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য থেকে শুরু করে এনালগ কম্পিউটারে যাবতীয় বিষয়বস্তু আপনাদের সামনে আলোচনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আপনারা এনালগ কম্পিউটারে সকল বিষয়বস্তু সম্পর্কিত তথ্য জানতে পেরেছেন এই পোস্টটি থেকে।