ডিজিটাল কম্পিউটার কি? ডিজিটাল কম্পিউটারের প্রকারভেদ
ডিজিটাল কম্পিউটার কি? ডিজিটাল কম্পিউটারের প্রকারভেদ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পাদন হয়ে থাকে। আর আধুনিক যুগে কাজের পরিধি এবং বিষয়বস্তু অনেক বেড়ে গিয়েছে। আর আমাদের এই বিভিন্ন মুখী কাজের জন্য বিভিন্ন ক্ষমতার ও গুণগত মান সম্পূর্ণ কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়। তাই আমাদের কাজে ধরন অনুযায়ী কম্পিউটারকে বাছাই করে নিতে হয়। কোন ধরনের কম্পিউটার আমাদের প্রয়োজন।আমাদের কাজের পরিধি এবং গঠনগত দিক থেকে কম্পিউটারকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :-
এনালগ কম্পিউটার
হাইব্রিড কম্পিউটার
ডিজিটাল কম্পিউটার
তবে বর্তমান সময় হচ্ছে আধুনিক যুগ।আরে আধুনিক যুগের কাজগুলো সম্পাদন করতে ডিজিটাল কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়। সহজ ভাষায় বলা যায় আধুনিক যুগের কম্পিউটারকে ডিজিটাল কম্পিউটার বলা হয়। বন্ধুরা আজকে আমাদের এই আলোচনার মূল বিষয়গুলো হচ্ছে ডিজিটাল কম্পিউটারের পরিচিতি এবং এর প্রকারভেদ। সেই সাথে থাকবে ডিজিটাল কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য গুলো ইত্যাদি ডিজিটাল কম্পিউটার সম্পর্কিত সম্পূর্ণ বিষয়বস্তু নিয়ে। আজকের এই আলোচনাটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনার ডিজিটাল কম্পিউটার সম্পর্কে সম্পূর্ণ একটি ধারণা হয়ে যাবে আশা করা যায়। তাই মনোযোগ সহকারে আমাদের এই আর্টিকেলটি করতে থাকেন।
ডিজিটাল কম্পিউটার কি (what is digital computer)
ডিজিটাল কম্পিউটার বলতে এমন এক ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র কে বুঝায় যে যন্ত্রের সাহায্যে ডাটা ইনপুট করা যায় এবং সেই ডেটাকে প্রসেস করে আউটপুট হিসাবে আউটপুট ডিভাইসের মধ্যে আউটপুট প্রদান করা হয়। ডিজিটাল কম্পিউটার গুলোতে যেকোনো ধরনের গণনার জন্য বাইনারি নম্বর সিস্টেম (binary number system) ব্যবহার করা হয়। বাইনারি (binary) নাম্বার গুলো হল (0 ও 1)। বাইনারি সংখ্যার মধ্যে জিরো (0)বলতে নিম্ন বিভাগকে বুঝানো হয় এবং ওয়ান(1) বলতে উচ্চ বিভাগকে বুঝানো হয়ে থাকে।অনেক সময় আবার জিরো (0) এবং ওয়ান (1) সংখ্যাকে অন ও অফ বলেও চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
কম্পিউটার কে আমরা যা কিছু ইনপুট দেই সেই ইনপুট করা ডাটা গুলোকে কম্পিউটার (0 এবং 1) তথা বাইনারি ভাষাতে কনভার্ট করে প্রসেস করে নেয় এবং এবং সেই ডাটা গুলোকে আবার আমাদের ভাষাতে প্রসেস করে আউটপুট হিসাবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে।
মূলত আধুনিক কম্পিউটার কে ডিজিটাল কম্পিউটার বলা হয়ে থাকে। ডিজিটাল কম্পিউটার বাইনারি পদ্ধতিতে কাজ সম্পাদন করে থাকে। ডিজিটাল কম্পিউটার সাধারণত তিনটি প্রসেসের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করে থাকে। ডিজিটাল কম্পিউটার প্রথমে ডেটা ইনপুট হিসেবে গ্রহণ করে এবং সেটাকে প্রসেস করা। এরপর সেই প্রসেসিং আবার আউটপুট ডিভাইসের মাধ্যমে আমাদের সামনে ফলাফল উপস্থাপন করে থাকে।
আরও পড়ুন: কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম কি?
ডিজিটাল কম্পিউটার কাকে বলে
যে সমস্ত কম্পিউটার ডিজিটাল তথ্য বা ডিজিটাল সিগন্যাল নিয়ে কাজ করে থাকে তাকে ডিজিটাল কম্পিউটার বলা হয়। ডিজিটাল কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় মূলত সুক্ষ এবং সঠিক ফলাফল পাওয়ার জন্য। বর্তমান সময় Digital computer গুলো সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডিজিটাল কম্পিউটারকে পার্সোনাল কম্পিউটার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ডিজিটাল কম্পিউটারের উদাহরণ হচ্ছে ডেক্সটপ, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ডিজিটাল ক্যামেরা, ডিজিটাল ঘড়ি, ক্যালকুলেটর ইত্যাদি ডিভাইস ডিজিটাল কম্পিউটারের উদাহরণ। এই সমস্ত ডিভাইস বাইনারি সিস্টেম ইনপুটমেন্ট করে সেটাকে প্রসেস করে আমাদের সামনে আউটপুট দেয়।
ডিজিটাল কম্পিউটারের ইতিহাস (History of digital computer)
১৯৪০ দশকের শুরুর দিকে John V. Atanasoff এবং তার একজন ছাত্র যার নাম ছিল Clifford Edward Berry তারা দুজনে মিলে ABC অর্থাৎ Atanasoff-Berry computer তৈরি করেছিলেন। সেটাই ছিল প্রথম ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার।প্রথমে গণিত সংখ্যার গণনার জন্য বাইনারি সিস্টেম ব্যবহার করে John V. Atanasoff ডিজিটাল কম্পিউটার তৈরি করেছিলেন। পরে তা ধীরে ধীরে আরো উন্নত হয়ে ডিজিটাল কম্পিউটারে রূপ নিতে লাগলো। বর্তমান সময়ের সব থেকে বহুল ব্যবহৃত কম্পিউটারের নাম হচ্ছে ডিজিটাল কম্পিউটার।
ডিজিটাল কম্পিউটার কত প্রকার (Types of digital computer)
কম্পিউটারের সাইজ প্রকার এবং কাজ করার ক্ষমতা উপর ভিত্তি করে ডিজিটাল কম্পিউটারকে মূলত চার ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :-
সুপার কম্পিউটার (super computer)
মিনি কম্পিউটার (mini computer)
মেইন ফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe computer)
মাইক্রো কম্পিউটার (micro computer)
চলুন তাহলে নিচে এই প্রত্যেকটি বিভাগের আরো বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
আরও পড়ুন: সিএসএস এর ডিফল্ট কোড কী.?
সুপার কম্পিউটার কি (what is super computer)
সুপার কম্পিউটার বলতে এমন কম্পিউটার গুলোকে বুঝানো হয়ে থাকে যে কম্পিউটার গুলো হাজার হাজার প্রসেসরে সমন্বয়ে গঠিত হয়।সুপার কম্পিউটার অনেকগুলো প্রক্রিয়া বা প্রসেসিং চালানোর মতো ক্ষমতা রাখে। সুপার কম্পিউটারগুলো এত বেশি ক্ষমতা এবং শক্তিশালী হয়ে থাকে যে সুপার কম্পিউটারের প্রসেসর প্রতি সেকেন্ডে বিলিয়ন নির্দেশনা চালাতে পারে। সুপার কম্পিউটার গুলোর ক্ষমতা অনেক বেশি থাকায় এই কম্পিউটার গুলোকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং প্রকৌশলের ক্ষেত্রগুলোতে রাখা হয়। কারন সেসব জায়গায় প্রচুর পরিমাণে ডেটাবেজ রক্ষণাবেক্ষণার প্রয়োজনীয়তা থাকে।
তাই বলা চলে সুগার কম্পিউটার হলো ব্যয়বহুল এবং অত্যন্ত দ্রুত গতি সম্পন্ন কম্পিউটার। এই কম্পিউটার গুলো আকারে অনেক বড় হয়ে থাকে।তবে এই কম্পিউটারগুলোর সাহায্যে একসাথে অনেকগুলো কাজ দ্রুত করা সম্ভব হয়ে থাকে।
সুপার কম্পিউটারের উদাহরণ
সুপার কম্পিউটার গুলোর উদাহরণ হচ্ছে ইন্টেল কর্পোরেশনের প্যারাগন জাপানের নিপ্পন ইলেকট্রনিক কোম্পানির Super SX ll এবং Cyber 205 ইত্যাদি কম্পিউটার গুলো।
মিনি কম্পিউটার কি (what is mini computer)
এই কম্পিউটারগুলো আকারে ছোট হওয়ার কারণে এই কম্পিউটারের নামে কম্পিউটার রাখা হয়েছে। এই কম্পিউটার গুলোকে আবার অনেকে মিনি ফ্রেন্ড কম্পিউটার নামেও বলে থাকে। এসব কম্পিউটার আকারে ছোট হলেও এর একাধিক ইনপুট আউটপুট ডিভাইস থাকে। মিনি কম্পিউটার টার্মিনালের মাধ্যমে শতাধিক ব্যবহারকারীর কাজ সম্পন্ন করতে পারে।
মিনি কম্পিউটার গুলো জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ হচ্ছে এই কম্পিউটার মাল্টি প্রসেসিং ভাবে কাজ করে থাকে। মেইন ফ্রেম কম্পিউটারের তুলনায় মিনি কম্পিউটারের কাজের ক্ষমতা কম থাকে। যে সকল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না এবং কাজের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে সে সকল প্রতিষ্ঠানে মিনি ফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ বলা চলে বড় বড় গার্মেন্টস কারখানা, হাসপাতাল বহুজাতিক কোম্পানি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে মিনি কম্পিউটার গুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
মিনি কম্পিউটারের উদাহরণ
মিনি কম্পিউটারের উদাহরণ হচ্ছে IBM's AS/400e, Honeywell200, TI-990 ইত্যাদি।
মেইন ফ্রেম কম্পিউটার কি (what is Mainframe computer)
মেইন ফ্রেম কম্পিউটার গুলো আকারের দিক থেকে অনেক বড় এবং বিশাল হয়ে থাকে। মেইন ফ্রেম কম্পিউটার গুলো একটি বড় কেন্দ্রীয় মেশিনের মত। মেইন ফ্রেম কম্পিউটারে রয়েছে বিশাল স্টোরেজ স্পেস। সেই সাথে রয়েছে একাধিক হাই গ্রেট প্রসেসর। এই কম্পিউটার গুলো সাধারণত অন্য কম্পিউটারের তুলনায় উচ্চ প্রসেসিং ক্ষমতা সম্পন্ন করে থাকে। মেইন ফ্রেম কম্পিউটার উচ্চ প্রসেসিং ক্ষমতা সম্পন্ন হওয়ার কারণে বড় বড় বৈজ্ঞানিক গবেষণা বিভিন্ন সংস্থা পরিসংখ্যান এবং আদমশুমারির মতো সংস্থাগুলোর মতো ডেটা স্টোরেজ এবং প্রসেসিং করার জন্য এই কম্পিউটার গুলো ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
মেইন ফ্রেম কম্পিউটার গুলো অনেক বেশি উচ্চ গতিতে একসাথে একাধিক জটিল প্রোগ্রাম চালনা করতে পারে।তবে মেইন ফ্রেম কম্পিউটার সুপার কম্পিউটারের তুলনায় কিছুটা কম ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে থাকে। এই কম্পিউটার সাথে অনেকগুলো ছোট ছোট কম্পিউটার সংযুক্ত থাকে। যার ফলে ব্যবহারকারীর একাধিক কাজ একসঙ্গে এ কম্পিউটার করে দিতে পারে। এই কম্পিউটার গুলোতে হাই লেভেলের ভাষা এবং সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
মেইনফ্রেম কম্পিউটারের উদাহরণ
নিচে মেইন ফ্রেম কম্পিউটারের উদাহরণ গুলো দেওয়া হল - IBM Z15, IBM Z14, NCR N 8370, IBM 3033, UNIVACC 1180, Cyber 170 ইত্যাদি।
মাইক্রো কম্পিউটার কি (what is microcomputer)
মাইক্রোকম্পিউটার হচ্ছে কম্পিউটারের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র আকৃতির কম্পিউটার। মাইক্রোকম্পিউটার এর নামের মধ্যেই রয়েছে এই কম্পিউটারের আকৃতি। মাইক্রো (micro) শব্দের অর্থ হচ্ছে ক্ষুদ্র আর কম্পিউটার বলতে তো আমরা সবাই বুঝি কম্পিউটার। মাইক্রো কম্পিউটার শব্দের অর্থ একত্রে ক্ষুদ্র আকৃতির কম্পিউটার। সাধারণত এ ধরনের মাইক্রো কম্পিউটার গুলো পার্সোনাল কাজের জন্য বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সেই দিক বিবেচনায় বেশিরভাগ মানুষ আবার এই কম্পিউটারকে পার্সোনাল কম্পিউটার ও বলে থাকে।
Intel নামক একটি প্রতিষ্ঠান ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে সর্বপ্রথম মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করেন। সেই মাইক্রোপ্রসেসর টি Intel 4004 নামে পরিচিত ছিল। সেখান থেকে মূলত ধীরে ধীরে মাইক্রো কম্পিউটারের উৎপত্তি ঘটেছিল। এই মাইক্রো কম্পিউটার গুলো অফিস আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই মাইক্রো কম্পিউটারটি তেমন একটা ব্যয়বহুল নয় এবং এর আকারও অনেক ছোট তাই সহজে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়।
মাইক্রো কম্পিউটারের উদাহরণ
মাইক্রো কম্পিউটারের উদাহরণগুলো হল - IBM PC, Apple, Macintoch, pentium- I ইত্যাদি।
আশা করি, উপরোক্তা আলোচনা থেকে আপনারা ডিজিটাল কম্পিউটার কি এবং ডিজিটাল কম্পিউটার প্রকারভেদ সম্পর্কে খুব ভালো একটা ধারণা পেয়ে গেছেন ইতিমধ্যে।আমরা খুব সহজ ও সাবলীল ভাষায় ডিজিটাল কম্পিউটার কি এবং ডিজিটাল কম্পিউটার প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করছি উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনারা ডিজিটাল কম্পিউটার সম্পর্কে এবং ডিজিটাল কম্পিউটার প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিয়েছেন।